বরগুনা প্রতিবেদক ॥ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট থেকে আজও দুপায়ে স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সাবেক সহ সম্পাদক বরগুনার খলিলুর রহমান।আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আহত খলিলের সারাবছর সমস্যা না হলেও শীতকালে তীব্র যন্ত্রণা হয় ক্ষতস্থানগুলোতে। তিনি সে দিনের ভয়াল স্মৃতির কথা জানান। বলেন, ‘২১শে আগস্টের ঘটনা খুবই দুর্বিষহ এবং হৃদয়বিদারক। সেদিনের সেই বর্বরতার কথা মনে করলে এখনও আঁতকে শিউরে উঠি। দুপুর ১টার দিকে আমি বাসা থেকে বের হই। গুলিস্তান চত্বর, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ লোকে লোকারণ্য, স্লোগানে মুখরিত গোটা এলাকা। চারটার কিছু আগে জননেত্রী শেখ হাসিনা আসলেন। ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ। কেন্দ্রীয় নেত্রীবৃন্দ মঞ্চে দাঁড়িয়ে নেত্রীকে স্বাগত জানালেন। আমি ঠিক উত্তর পূর্বদিকে সামনে দাঁড়ানো। আমার সামনে প্রয়াত আইভি রহমান ও মীরপুরের সাংসদ ইলিয়াস আলী মোল্লাসহ আরও অনেকে।’
‘ঠিক চারটার দিকে বঙ্গবন্ধু কন্যা বক্তৃতা শুরু করলেন। ৪০ মিনিটের মত সময় তিনি বক্তৃতা করেন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে তিনি শেষ করা মাত্রই রমনা মার্কেটের দিক থেকে বিষ্ফোরণের বিকট শব্দ। কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারিনি, এর মধ্যেই দ্বিতীয় বিস্ফোরণ। নেত্রীকে গাড়িতে তুলে কাছে থাকা নেতাকর্মীরা চারপাশে একটি মানববেষ্টনি তৈরি করেন। এরপর থেকে আর কিছু মনে নেই।’
তবে আমাকে যারা উদ্ধার করেছেন, তারা বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবের সামনে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে আমাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে আহতদের ওপরে পুলিশের লাঠিচার্জের কারণে সেখান থেকে ধানমন্ডির ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে আমার হুঁশ ফেরে। পায়ের ব্যথার যন্ত্রণায় খুব কাতরাচ্ছিলাম। ট্রমা সেন্টারে পরিচিত এক চিকিৎসক আমাকে দেখে পরদিন গ্রিন লাইফ হাসপাতালে এনে ভর্তি করান। সেখানে ১৬-১৭ দিন থাকার পর কিছুটা সুস্থ হলে বাসায় ফিরে আসি।’ তিনি বলেন, ‘দুই পায়ে এখনও অনেক স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছি। সারা বছর কোনো সমস্যা না হলেও শীতকালে ক্ষতের জায়গাগুলোতে খুবই যন্ত্রণা হয়।’ খলিলুর রহমান মনে করেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মতো শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে পরিপূর্ণ নিশ্চিহ্ন করতে ২০০৪ সালে পরিকল্পিতভাবে বোমা হামলা করা হয়েছিল। তার একটাই কথা, ‘এখনও যাদের বিচার হয়নি, তাদের শাস্তি নিশ্চিত হলেই কেবল মরেও শান্তি পাবো।’
Leave a Reply